
.
বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)-কে কয়টি কঙ্কর কুড়িয়ে আনতে বললেন। ইবন আব্বাস ইঞ্চিখানেক মাপের ৭টি কঙ্কর আনলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ কঙ্করগুলো নেড়েচেড়ে বললেন, “এই মাপের কঙ্কর নিক্ষেপ করবে” (এরচেয়ে বড় নয়)। এরপর বললেন,
وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِي الدِّينِ
“আমি তোমাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে কট্টরতা করার বিষয়ে সতর্ক করছি। তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।” (সুনান আন- নাসায়ী, ৩০৫৭)।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বারবার আমাদেরকে দ্বীনি বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা কট্টরতার ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। দ্বীনি বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে লাভবান হওয়া তো দুরের কথা; কয়দিন পর এই কট্টরতা আপনাকে দ্বীন থেকে বিমুখ করে দেবে। রাসূল ﷺ বলেছেন,
إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيْءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ
“নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি দ্বীনকে কঠিন করে তুলে, দ্বীন তাকে পরাভূত করে দেয়। সুতরাং মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, সাধ্য অনুযায়ী আমল করো, (নিজেকে-অন্যকে) সুসংবাদ দাও। সকাল-সন্ধ্যা এবং শেষরাতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।” (সহীহ বুখারী, ৩৯)।
ইদানিং বাংলাদেশে একটি ‘ইসলামপন্থী’ শ্রেণীর মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যে চরম বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভয়াবহ হবে। এখনই হয়ে গেছে। একটি লোক যতবড় যিন্দিক হোক; তার দেহ কবর থেকে তুলে আপনি পুড়াতে পারেন না। ইসলামে একজন কাফিরের মৃতদেহের প্রতিও সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। মৃতদেহ বিকৃত করার যদি সামান্য বৈধতা থাকত, তাইলে সর্বপ্রথম রাসূল ﷺ এর হক ছিল, তিনি হামযা (রা.)-কে হত্যাকারীদের এমন শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু রাসূল ﷺ এটিকে হারাম করেছেন। প্রশাসন ওই যিন্দিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ মানলাম (অবশ্য বাংলাদেশের প্রশাসন কখনোই সফল হয় না), তবু এই নৃশংসতা আপনি করতে পারেন না।
গত কয়দিনে মীলাদুন্নবী নিয়ে দেশে একপ্রকার গৃহযুদ্ধ হয়ে গেল। মীলাদুন্নবী পালন করতে না দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে একশ্রেণী লাঠিসোটা সমেত মাঠে হাজির। ঈদে মীলাদুন্নবী ﷺ পালনের পক্ষে যেমন আমাদের যুক্তি-প্রমাণ ও ঐতিহ্য আছে, বিপক্ষেও নিশ্চয় আছে। এগুলো নিয়ে একাডেমিক আলোচনা হতে পারত। কিন্তু হয়নি। সম্ভবত কিছু ‘তৌহিদি জনতা’ মনে করেছেন, এতে তাদের পরহেজগারি পুরোপুরি প্রকাশ হবে না!
অসহিষ্ণুতা বেশিদিন একমুখী চলে না। অসহিষ্ণুতা আরেক অসহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। পাকিস্তান এর প্রমাণ। পাকিস্তানে ধর্মীয় বিরোধ নিয়ে মসজিদ, মাযার ইত্যাদিতে হামলা করা নিত্যদিনের কাহিনী। ইশকে রাসূলের নামে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার আগে মানুষকে পিটিয়ে, জ্বালিয়ে ফেলা স্বাভাবিক ঘটনা, প্রায়ই ওখানে হয়। আমরাও এমন একটি সমাজের দিকে এগুচ্ছি সম্ভবত, আল্লাহুল মুসতা’আন।
পরিশেষে একটি ফতওয়া দিয়ে শেষ করি। ফতওয়া আমার বা কোনো আলিমের নয়। ফতওয়া তাঁর, যার ওপর আপনি ঈমান এনেছেন। আমাদের নবী ﷺ তিনবার বলেছেন,
أَلاَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ
“সাবধান! কট্টরপন্থীরা ধ্বংস হয়ে গেছে (বা ধ্বংস হোক)।” (সহীহ মুসলিম, ২৬৭০)।
রবিউল আউয়ালের পবিত্র মাসে কামনা করি, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর হাবীব ﷺ এর চারিত্রিক মাধুর্য, সহজতা ও সহনশীলতা থেকে কিছু শেখার তাউফীক দিন। আমীন।। – মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী।
সুরমা দর্পণ ডেস্ক :