Dhaka ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের বাড়ীতে পুলিশের অভিযান, আটক, ১ মাওলানা মোহাম্মাদ হুছাম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার গুঞ্জন। ফুলসাইন্দ প্রীতি ফুটবল ম্যাচে উৎসবের আমেজ। সিলেট চার আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা। পারভেজ মল্লিকের ওপর হামলার ঘটনার লন্ডনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ। তালামীযে ইসলামিয়া বড়লেখা উপজেলা, পৌর ও সরকারি কলেজ শাখার যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত। মাওলানা আব্দুল হান্নান তুরুকখলীর ‘সাহিত্যকর্ম’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশিত। বয়লার রুমে কাজ করছিলেন ৬ শ্রমিক, বি*স্ফো\\র*ণে ঝলসে যান সবাই। হাফিজ জামাল উদ্দীনের জানাজা রেঙ্গা আশুগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা মাঠে সম্পন্ন . ইমামকে হু’ম’কি ও অ*প*হ’র’ণ: ই-স-ক-নে-র ভূমিকা উদ্বেগজনক, দো-ষী-দের দ্রুত বিচার করতে হবে: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

‎জেনারেল মোহাম্মদ আতাউর গনি ওসমানী বাঙালি জাতির সর্বাধিনায়কের জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা। ‎

  • আব্দুর রাজ্জাক
  • আপডেটের সময়: ১১:৩৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩৭৪ সময় দেখুন

‎বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে কয়েকজন নেতার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী, যার উপাধি বঙ্গবীর। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, যাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে চাকরি করা এবং যুদ্ধ করার মতো দুর্লভ কৃতিত্ব আছে এমন হাতেগোনা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তিনি একজন।

জেনারেল ওসমানী জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ শহরে (তাঁর নানাবাড়িতে)। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার দয়ামীর গ্রামে, যা বর্তমানে সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার অন্তর্গত।
‎তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (সাব-ডিভিশনাল অফিসার, এসডিও) এবং মাতা জোবেদা খাতুন। ‎পরিবারে তাঁরা ছিলেন ছয় ভাইবোন, তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম।

‎পারিবারিক তত্ত্বাবধানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৩ সালে ভর্তি হন কটন স্কুল অব আসাম-এ। ১৯৩২ সালে ভর্তি হন সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুলে।
‎১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পান, এই কৃতিত্বের জন্য তিনি “প্রিটোরিয়া পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে ১৯৩৮ সালে ভূগোল বিষয়ে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি (BA Honours in Geography) অর্জন করেন।
‎এর পর তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন, কিন্তু তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

‎১৯৩৯ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার ট্রেনিং একাডেমিতে (Dehradun Military Academy) প্রশিক্ষণে যোগ দেন এবং অক্টোবর ১৯৪০ সালে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার “Second Lieutenant” (Artillery) হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করেন।

‎১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ Temporary Captain পদোন্নতি পান। ব্রিটিশ বাহিনীর বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধের সময় ২৩ মে ১৯৪২ সালে Temporary Major পদে উন্নীত; তখন তিনি অত্যন্ত তরুণ মেজর ছিলেন । পরবর্তীতে বিভিন্ন প্লাটুন কমান্ডার, কোম্পানি অফিসার এবং ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
‎১৯৪৪–৪৫ সালে Grade-2 General Staff Officer হিসেবে HQ তে দায়িত্ব পালন করেন, পরে Senior Officers Course সম্পন্ন করেন ।
‎১৯৪৬ সালে ক্যাপ্টেন পদে স্থায়ী পদোন্নতি পান।

‎৪৭ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে তিনি
‎৭ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরের দিন Acting Lieutenant Colonel হিসেবে পদোন্নতি পান ।
‎১৯৪৮ সালে Quetta Staff College-এ Staff Course; PSC ডিগ্রি অর্জন করেন।
‎১৯৪৯ তিনি Deputy to the Chief of General Staff হিসেবে নিযুক্ত ।

‎১৯৫১ সালে Jessore-এ East Bengal Regiment-এ প্রথম বাঙালি হিসেবে CO নিযুক্ত হন। ১৯৫৩–৫৫ পর্যন্ত তিনি East Bengal Regimental Centre, Chittagong-এ Commandant হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
‎১৯৫৬ Colonel পদে পদোন্নতি পেয়ে GHQ Rawalpindi-এ Deputy Director, Military Operations হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
‎১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হন। উনার দক্ষতা, পেশাদারিত্বের কারণে ব্যারাক ওসমান নামেও বাহিনীতে পরিচিত ছিলেন।
‎পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালি অফিসারদের জন্য বৈষম্যমূলক নীতি ও বাঙালিদের প্রতি বৈরী আচরণের কারণে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সালে তিনি বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ ।

‎১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর পথচলা শুরু হয়।একই বছর সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৪ আসন (বালাগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকা) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
‎মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রবাসী সরকার-এ মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-Chief) হিসেবে নিযুক্ত হোন।
‎তাঁর নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে সংগঠিত করা হয়। পরে তা ১১টি সেক্টরে রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, গেরিলা আক্রমণ ও সীমান্ত ঘাঁটি গড়ে তোলা সবই তাঁর সামরিক মেধা ও নেতৃত্বের ফল। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পথ সুগম করে।
‎২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ জেনারেল (৪ স্টার) পদে উন্নীত হোন, যা বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র পদ।

‎স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান হন। ৭ এপ্রিল ১৯৭২ তিনি অবসরে যান।
‎১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন, যদিও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তখন ভোট কারচুপি করার অভিযোগ উঠে। তিনি সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন (Shipping, Inland Water Transport, Aviation; পরে Post, Telegraph & Telephone, Communication ইত্যাদি)। মে ১৯৭৪ সালে তিনি মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেন।

‎বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে তিনি ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগ ও সংসদ সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দেন।
‎তিনি ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট খোন্দকার মোস্তাক আহমদের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভাইজার (Defence Affairs) নিযুক্ত হন। একই বছরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তিনি পদত্যাগ করেন।

‎ ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় জনতা পার্টি (Jatiya Janata Party) প্রতিষ্ঠা করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন ।
‎৩রা জুন ১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট (Ganatantrik Oikkya Jote) সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন (প্রাপ্ত ভোট মাত্র ২১.৭০%) নির্বাচনে জয় লাভ করেন জিয়াউর রহমান (মোট প্রাপ্ত ভোট ৭৬.৬৩%)।

‎১৯৮৩ সালে CMH (Combined Military Hospital) এ চিকিৎসা চলাকালীন ক্যান্সার ধরা পড়ে; তৎপরবর্তী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে প্রেরণ করা হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন; তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয় এবং সিলেটের শাহজালাল দরগার পাশেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন ।

‎তাঁর নামে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানীনগর উপজেলা, ওসমানী জাদুঘর ও ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মহান এই বীরের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে উনাকে স্মরণ করছি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। তাঁর বীরত্বগাথা ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

‎সম্পাদনা
‎আব্দুর রাজ্জাক

আরও পড়ুনঃ  সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের বাড়ীতে পুলিশের অভিযান, আটক, ১
Tag :

সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের বাড়ীতে পুলিশের অভিযান, আটক, ১

‎জেনারেল মোহাম্মদ আতাউর গনি ওসমানী বাঙালি জাতির সর্বাধিনায়কের জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা। ‎

আপডেটের সময়: ১১:৩৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‎বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে কয়েকজন নেতার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী, যার উপাধি বঙ্গবীর। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, যাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে চাকরি করা এবং যুদ্ধ করার মতো দুর্লভ কৃতিত্ব আছে এমন হাতেগোনা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তিনি একজন।

জেনারেল ওসমানী জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ শহরে (তাঁর নানাবাড়িতে)। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার দয়ামীর গ্রামে, যা বর্তমানে সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার অন্তর্গত।
‎তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (সাব-ডিভিশনাল অফিসার, এসডিও) এবং মাতা জোবেদা খাতুন। ‎পরিবারে তাঁরা ছিলেন ছয় ভাইবোন, তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম।

‎পারিবারিক তত্ত্বাবধানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৩ সালে ভর্তি হন কটন স্কুল অব আসাম-এ। ১৯৩২ সালে ভর্তি হন সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুলে।
‎১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পান, এই কৃতিত্বের জন্য তিনি “প্রিটোরিয়া পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে ১৯৩৮ সালে ভূগোল বিষয়ে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি (BA Honours in Geography) অর্জন করেন।
‎এর পর তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন, কিন্তু তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

‎১৯৩৯ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার ট্রেনিং একাডেমিতে (Dehradun Military Academy) প্রশিক্ষণে যোগ দেন এবং অক্টোবর ১৯৪০ সালে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার “Second Lieutenant” (Artillery) হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করেন।

‎১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ Temporary Captain পদোন্নতি পান। ব্রিটিশ বাহিনীর বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধের সময় ২৩ মে ১৯৪২ সালে Temporary Major পদে উন্নীত; তখন তিনি অত্যন্ত তরুণ মেজর ছিলেন । পরবর্তীতে বিভিন্ন প্লাটুন কমান্ডার, কোম্পানি অফিসার এবং ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
‎১৯৪৪–৪৫ সালে Grade-2 General Staff Officer হিসেবে HQ তে দায়িত্ব পালন করেন, পরে Senior Officers Course সম্পন্ন করেন ।
‎১৯৪৬ সালে ক্যাপ্টেন পদে স্থায়ী পদোন্নতি পান।

‎৪৭ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে তিনি
‎৭ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরের দিন Acting Lieutenant Colonel হিসেবে পদোন্নতি পান ।
‎১৯৪৮ সালে Quetta Staff College-এ Staff Course; PSC ডিগ্রি অর্জন করেন।
‎১৯৪৯ তিনি Deputy to the Chief of General Staff হিসেবে নিযুক্ত ।

‎১৯৫১ সালে Jessore-এ East Bengal Regiment-এ প্রথম বাঙালি হিসেবে CO নিযুক্ত হন। ১৯৫৩–৫৫ পর্যন্ত তিনি East Bengal Regimental Centre, Chittagong-এ Commandant হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
‎১৯৫৬ Colonel পদে পদোন্নতি পেয়ে GHQ Rawalpindi-এ Deputy Director, Military Operations হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
‎১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হন। উনার দক্ষতা, পেশাদারিত্বের কারণে ব্যারাক ওসমান নামেও বাহিনীতে পরিচিত ছিলেন।
‎পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালি অফিসারদের জন্য বৈষম্যমূলক নীতি ও বাঙালিদের প্রতি বৈরী আচরণের কারণে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সালে তিনি বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ ।

‎১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর পথচলা শুরু হয়।একই বছর সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৪ আসন (বালাগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকা) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
‎মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রবাসী সরকার-এ মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-Chief) হিসেবে নিযুক্ত হোন।
‎তাঁর নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে সংগঠিত করা হয়। পরে তা ১১টি সেক্টরে রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, গেরিলা আক্রমণ ও সীমান্ত ঘাঁটি গড়ে তোলা সবই তাঁর সামরিক মেধা ও নেতৃত্বের ফল। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পথ সুগম করে।
‎২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ জেনারেল (৪ স্টার) পদে উন্নীত হোন, যা বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র পদ।

‎স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান হন। ৭ এপ্রিল ১৯৭২ তিনি অবসরে যান।
‎১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন, যদিও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তখন ভোট কারচুপি করার অভিযোগ উঠে। তিনি সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন (Shipping, Inland Water Transport, Aviation; পরে Post, Telegraph & Telephone, Communication ইত্যাদি)। মে ১৯৭৪ সালে তিনি মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেন।

‎বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে তিনি ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগ ও সংসদ সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দেন।
‎তিনি ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট খোন্দকার মোস্তাক আহমদের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভাইজার (Defence Affairs) নিযুক্ত হন। একই বছরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তিনি পদত্যাগ করেন।

‎ ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় জনতা পার্টি (Jatiya Janata Party) প্রতিষ্ঠা করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন ।
‎৩রা জুন ১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট (Ganatantrik Oikkya Jote) সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন (প্রাপ্ত ভোট মাত্র ২১.৭০%) নির্বাচনে জয় লাভ করেন জিয়াউর রহমান (মোট প্রাপ্ত ভোট ৭৬.৬৩%)।

‎১৯৮৩ সালে CMH (Combined Military Hospital) এ চিকিৎসা চলাকালীন ক্যান্সার ধরা পড়ে; তৎপরবর্তী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে প্রেরণ করা হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন; তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয় এবং সিলেটের শাহজালাল দরগার পাশেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন ।

‎তাঁর নামে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানীনগর উপজেলা, ওসমানী জাদুঘর ও ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মহান এই বীরের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে উনাকে স্মরণ করছি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। তাঁর বীরত্বগাথা ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

‎সম্পাদনা
‎আব্দুর রাজ্জাক

আরও পড়ুনঃ  সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের বাড়ীতে পুলিশের অভিযান, আটক, ১